সাইবার বুলিং
সাইবার বুলিং
নিশিকে উত্ত্যক্ত করছে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অর্ক। এখন কী করবে সে? কী করে নিশি সামাল দেবে বিষয়টা!
নবম শ্রেণীতে পড়ে মাইশা, নিশি ও সায়মা। নওশিন ও অর্ক পড়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে। মাইশার বড় বোন নওশিন। প্রত্যেকেই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কেউ কেউ বাসায় কম্পিউটার ব্যবহার করে। অবসর সময়ে তারা এলাকার ফাস্ট ফুডের দোকান ক্যাফে ইলেভেনে আড্ডা দেয়। কিছুদিন ধরে নিশির খুব মন খারাপ, এটা তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মাইশা আর সায়মাও খেয়াল করে।
একদিন বিকালে তারা ক্যাফে ইলেভেনে আড্ডা দিতে আসে-
মাইশা:
মাইশা নিশি কি আসবে? খেয়াল করেছিস সারাক্ষণ ও কি যেনো চিন্তা করে।
সায়মা: বলেছিলো
আসবে। হ্যাঁ, আমিও খেয়াল করেছি।
মাইশা: নিশি
সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। কম কথা বলে।
সায়মা: ওই তো নিশি আসছে। এ…….ই…. নিশি এদিকে আয়।
তিন বান্ধবী একটা টেবিলে বসে। হাতে কফির কাপ . .
সায়মা: নিশি তোর কী হয়েছে?
কদিন ধরেই দেখছি তোর মন খারাপ।
নিশি: নারে, আমার কিছুই
হয়নি।
মাইশা: তুই যদি আমাদের
বন্ধু বলে মনে করিস, তাহলে বল কী হয়েছে?
নিশি: তাহলে শোন, ইন্টারের
ছাত্র অর্ক কদিন আগে আমাকে প্রোপজ করেছে। ও নাকি আমার ওপর ক্রাশ খেয়েছে।
মাইশা: তারপর কী হলো?
নিশি: আমি রাজি হইনি।
এরপর থেকে অর্ক আমাকে নানাভাবে বিরক্ত করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় খারাপ কমেন্ট করে, আজেবাজে
কথা লেখে, হুমকিও দেয়।
মাইশা: চল, বিষয়টা নিয়ে
আমার বড় বোন নওশিনের সাথে কথা বলি।
নিশি: আপু কি হেল্প
করতে পারবে? আমি কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারবো না।
সায়মা: আরে চিন্তা করিস না। তোকে কিছুই বলতে হবে না, যা বলার আমি বলবো।
সব কথা শোনার পর নওশিন বলে-
নওশিন: হু..এটা হলো সাইবার বুলিং। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাউকে উত্ত্যক্ত করাকে সাইবার বুলিং বলে। অনলাইনে কেউ যদি খারাপ কথা বলে, অপমান
করে, অশ্লীল ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে বা এমন কিছু করে যাতে আমরা
মানসিকভাবে আঘাত পাই, তাহলে বুঝতে হবে সাইবার বুলিং করা হচ্ছে।
সায়মা: সাইবার বুলিং
এ কী ধরনের আক্রমণ করা হয়?
নওশিন: মূলত মানসিকভাবে
আক্রমণ করা হয়। শুধু মেয়েরাই নয় ছেলেরাও সাইবার বুলিং এর শিকার হতে পারে।
নিশি: আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। নিজেকে খুব
অপরাধী মনে হচ্ছে।
নওশিন: সাইবার বুলিং
এর শিকার হলে নিজেকে কখনো দোষ দেবে না। কারণ এতে তোমার কোন অপরাধ নেই। এই ধরনের ঘটনা
ঘটলে বাবা-মা, বড় ভাই-বোন বা বন্ধুকে সব খুলে বলবে। কেউ বুলিং করলে পাল্টা আক্রমণ করবে
না। তবে কেউ যদি বড় ধরনের হুমকি দেয় যেমন- শারীরিক আক্রমণ, জীবননাশের হুমকি বা মানসম্মানহানিকর
আচরণ করে তাহলে বুলিং এর স্ক্রীনশট প্রমাণ হিসেবে সংগ্রহ করে সাথে সাথে থানায় অভিযোগ
করবে।
নিশি: আমার লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, খুব
পেইন ফিল করছি। এখন আমি কী করবো আপু?
নওশিন: চলো, কাল আমরা এই বিষয়ে অর্কের সাথে কথা বলি। ওকে ক্যাফেতে আসতে বলি।
পরের দিন বিকালে নিশি, নওশিন এবং অর্ক ক্যাফেতে বসে কথা বলছে।
নওশিন: অর্ক, তুই নিশিকে
ইন্টারনেটে উত্ত্যক্ত করিস কেন? এই অপরাধের কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে তোর
শাস্তিও হতে পারে।
অর্ক: কই তেমন কিছু না তো! নিশির সাথে
একটু মজা করেছি শুধু।
নওশিন: এটা মজা করার
বিষয় না অর্ক। তুই সাইবার বুলিং করেছিস। মজা আর বুলিং করার মধ্যে পার্থক্য আছে। তোর
মজা করা থেকে কেউ যদি আঘাত পায় তাহলে সেটা অপরাধ।
অর্ক: স্যরি নিশি, আমি এভাবে ভাবিনি।
আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি।
নিশি: ভাইয়া, যেহেতু আপনি আপনার ভুল বুঝতে
পেরেছেন। তাই ক্ষমা করলাম।
নওশিন: আর একটা কথা,
বুলিং শুধু ব্যক্তিগত নয় ধর্মীয়, জাতিগত, সম্প্রদায়গতও হতে পারে। এসব থেকে আমাদের মুক্ত
থাকতে হবে।
অর্ক:
বুলিং ধর্মীয়, জাতিগত, সম্প্রদায়গতও কিভাবে?
নওশিন: অনলাইনে অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণাসূচক মন্তব্য বা বুলিং করে, এডিট করে ভুয়া ছবি বা ভিডিও পোস্ট করে। এসব কাজের উদ্দেশ্য হলো সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষদের ‘ধর্ম আক্রান্ত হয়েছে’ বলে ভুল বুঝিয়ে দাঙ্গা লাগানো। চট্রগ্রামের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর কিংবা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় একই উপায়ে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজেই ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কখনো বুলিং করবে না। ধর্ম আক্রান্ত হওয়ার ভুয়া নিউজ, গুজব, প্রপাগান্ডা শেয়ার করবে না। বুলিং করলে অন্য নারী পুরুষ বা ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায়ের মানুষেরা আঘাত পায়, তারা কষ্ট পায়। অন্যদের কষ্ট দেয়া উচিত নয়।
অর্ক: আজ তুই আমার চোখ
খুলে দিয়েছিস নওশিন।
নিশি: আপনাকেও অনেক
থ্যাংকস ভাইয়া।
নওশিন: তোকেও অনেক থ্যাংকস।
সাইবার বুলিং থেকে রক্ষা পেতে আমাদের করণীয়
এবং বর্জনীয়
করণীয়-
১.
অনলাইনে জন্মতারিখ, ছবি, ফোন নম্বর, ইমেইল, ঠিকানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শেয়ার
করবো না।
২.
কেউ বুলিং করলে তাকে ব্লক করে দেবো।
৩.
যুক্তি দিয়ে কথা বলবো, পাল্টা আক্রমণ করবো না।
৪.
নিজেকে অপরাধী ভাববো না, দোষ দেবো না।
৫.
আপনজন কারো কাছে সব খুলে বলবো।
৬.
বুলিং এর স্ক্রিনশট সংগ্রহ করবো।
৭.
প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেবো।
বর্জনীয়-
১.
অপরিচিত কারো সাথে বন্ধুত্ব করবো না।
২.
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবো না।
৩.
অনলাইনে কাউকে উত্ত্যক্ত বা হয়রানি করবো না।
৪.
এমন কোন আচরণ করবো না যেনো কেউ কষ্ট পায়।
৫.
ধর্মীয়, জাতিগত, সম্প্রদায়গতভাবে কাউকে কটাক্ষ করবো না।
আরো
জানতে চাও?
১।
কোন কোন ডিভাইসের মাধ্যমে সাইবার বুলিং করা হয়?
উ:
ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট অর্থাৎ যেসব ডিভাইস যোগাযোগের কাজে
ব্যবহৃত হয়, সেগুলোই বুলিং করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
২।
সাইবার বুলিং কী আইনকে লঙ্ঘন করে?
উ:
বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুসারে
সাইবার বুলিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি বিভিন্ন মেয়াদে কারাবাস ও জরিমানা।
৩।
সাইবার বাইস্ট্যান্ডার কারা?
উ:
প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকার পরও যারা সাইবার বুলিং এর ঘটনা জানতে পেরে চুপ করে থাকে
বা এড়িয়ে যায়, তারাই সাইবার বাইস্ট্যান্ডার। কিন্তু সাইবার আপস্ট্যান্ডার ভিকটিমকে
নৈতিক সমর্থন দেবার পাশাপাশি বুলির আচরণকে যৌক্তিকভাকে বিরোধিতা করে।
৪।
সাইবার স্টকার কারা?
উ:
যারা ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করে, তারাই সাইবার স্টকার।
৫।
সাইবার স্টকারদের থেকে নিরাপদ রাখতে কী করা উচিত?
উ:
ক) অনলাইনে অপরিচিত কারো সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা।
খ)
সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়া।
গ)
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা।
ঘ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামনে কী করতে যাচ্ছো বা কোন ইভেন্টে যাবে, এসব ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য শেয়ার না করা।
মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাউকে উত্ত্যক্ত করাকে সাইবার বুলিং বলে। অনলাইনে কেউ যদি খারাপ কথা বলে, অপমান করে অশ্লীল ছবি বা ভিডিও শেয়ার ...
জানার আছে অনেক কিছু
![সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (প্রাথমিক)](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581334946_card-green-bg 1.png)
![সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (উন্নত)](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581334970_card-purple-bg 2.png)
![ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581334988_card-light-green-bg 1.png)
![ডিজিটাল আইন](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581335319_web15-13.png)