সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (প্রাথমিক)
সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (প্রাথমিক)
ডোমেইন নেইম আর ইউ আর এল দিয়ে কি নিরাপদ ওয়েবসাইট চেনা যায়? নাকি আরো কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হয়?
নবম শ্রেণীতে পড়ে নিশি, সায়মা, মাইশা, সামি এবং শাহানসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী। তাদের স্কুলের আইসিটি শিক্ষক রাকিব হাসান। ক্লাসে হাসান স্যার ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করছেন।
হাসান স্যার: কেমন আছো তোমরা?
শিক্ষার্থীরা একসাথে: ভালো আছি স্যার। আপনি কেমন আছেন?
হাসান স্যার: আমি ভালো আছি। আজ তোমাদের সাথে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলবো।
হাসান স্যার: পৃথিবীর লক্ষ কোটি কম্পিউটার যে সিস্টেমের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে সেটাই হলো ইন্টারনেট।
হাসান স্যার: কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদন থেকে শুরু করে লেখাপড়া, তথ্য ও গবেষণা, ঘর-গৃহস্থালীর কাজ এবং অফিস আদালতের সব কাজ করা যায়।
সামি: স্যার ইন্টারনেট আবিস্কার হলো কীভাবে?
হাসান স্যার: ১৯৬০ ইং সালে মার্কিন গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসাচ প্রজেক্টস এজেন্সি পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারের কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এটাই পরবর্তীতে ইন্টারনেট হিসেবে গড়ে ওঠে।
হাসান স্যার: এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ১৯৮৩ সালে সারা দুনিয়ার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়।
হাসান স্যার: মাইশা তুমি বলো তো ব্রাউজার কী?
মাইশা: আমি জানি না স্যার।
হাসান স্যার: ব্রাউজার হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেটে কোন কিছু পড়ি বা দেখি। আমরা যে ওয়েবসাইট দেখতে চাই ব্রাউজার আমাদের সেখানে নিয়ে যায়। ফায়ার ফক্স, ক্রোম, অপেরা, সাফারি, এজ প্রভৃতি এগুলো হলো ব্রাউজার।
হাসান স্যার: এবার আমি তোমাদের ইউআরএল আর ডোমেইন নেইম সম্পর্কে বলবো। এর সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, Uniform Resource Locator। URL হলো ওয়েবসাইটের ঠিকানা। প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য পৃথক URL থাকে। URL এর মধ্যে নিরাপদ এবং অনিরাপদ URL আছে।
মাইশা: অনিরাপদ URL চেনার উপায় কী স্যার?
হাসান স্যার: URL এর শুরুতে যদি Not secure অথবা http লেখা থাকে তাহলে সেটা অনিরাপদ আর যদি https লেখা থাকে, তাহলে সেটা নিরাপদ ওয়েবসাইট।
মাইশা: তাহলে ডোমেইন নেম কী স্যার?
হাসান স্যার: কোন ওয়েবসাইটের রেজিস্টার করা নামকে ডোমেইন নেইম বলে। একই ডোমেইন নেইম দিয়ে একাধিক ওয়েবসাইট থাকতে পারে না।
শাহান: ডোমেইন নেইম দেখে কি নিরাপদ ওয়েবসাইট চেনা যায়?
হাসান স্যার: হ্যাঁ যায়, ডোমেইন নেইমের সামান্য পরিবর্তন করে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। এই ছোট্ট পরিবর্তনটা যদি খেয়াল না করো তাহলে প্রতারকের খপ্পরে পড়বে।
শাহান: তাহলে আমি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম মুখস্ত করে রাখবো।
হাসান স্যার: হা...হা...সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি ডোমেইন নেইম আছে। এমন কি প্রয়োজনীয় ডোমেইন নেইমের সংখ্যাও হাজার হাজার। এতো নাম কোনোভাবেই মুখস্থ করে রাখা সম্ভব নয়, তাই সাবধান হতে হবে।
সায়মা: তাহলে এতোসব ওয়েবসাইটের মধ্যে আমরা কীভাবে সঠিক ওয়েবসাইট খুঁজে পাবো?
হাসান স্যার: এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়েছে সার্চ ইঞ্জিন। এবার এটাই বলবো।
হাসান স্যার: সার্চ ইঞ্জিন হলো এক বিশেষ ধরনের ওয়েব টুল যার মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য বা ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে পারি।
হাসান স্যার: গুগল, ইয়াহু, আস্ক, বিং, ডাক ডাক গো সহ অসংখ্য সার্চ ইঞ্জিন আছে।
সায়মা: ভাইরাস কী স্যার?
হাসান স্যার: ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম। কম্পিউটারে ভাইরাসের আক্রমণ হলে স্বাভাবিক কাজ করা যায় না।
হাসান স্যার: কম্পিউটার যদি বার বার রিস্টার্ট নেয়, তথ্য হারিয়ে যায় বা ডিলিট হয়ে যায়, হ্যাং করে, স্লো হয় তাহলে বুঝতে হবে কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ করেছে।
সামি: কিন্তু কম্পিউটারে ভাইরাস কীভাবে আসে?
হাসান স্যার: অনিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ, পেনড্রাইভ, ইমেইল, ভুয়া বা অনিরাপদ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে।
সামি: স্যার ওয়েবসাইট কী?
হাসান স্যার: ওয়েবসাইট বা শুধু সাইট হলো ছবি, অডিও, ভিডিও, গ্রাফিক্স-এনিমেশন বা ভিন্ন ধরনের ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টি। এক একটি ওয়েবসাইট এক একটি সার্ভারে জমা থাকে।
সামি: স্যার চাইলে আমি কি একটা ওয়েবসাইট বানাতে পারবো?
হাসান স্যার: অবশ্যই পারবে। এজন্য নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তোমাকে যে কোন সার্ভার থেকে স্পেস কিনতে হবে। তবে ব্যক্তিগত লেখালেখির জন্য সাধারণত ব্লগই ভালো।
সামি: স্যার আমরা প্রায় ব্লগ, ব্লগিং, ব্লগার কথাটা শুনি, এটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?
হাসান স্যার: নিশ্চয়, ব্লগ শব্দটি এসেছে ওয়েবলগ থেকে। যদি তোমার একটি ব্লগ থাকে বা তুমি যদি ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করো তাহলে তুমি একজন ব্লগার। তোমার লেখালেখির এই কাজটি হলো ব্লগিং।
নিশি: স্যার ওয়েবসাইট আর ব্লগের কি কোন পার্থক্য আছে ?
হাসান স্যার: ব্লগও এক ধরনের ওয়েবসাইট তবে চরিত্রগত কিছু পার্থক্য আছে। ব্লগ হলো টু ওয়ে কমিউনিকেশন অন্য দিকে ওয়েবসাইট ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন।
নিশি: কিন্তু স্যার এই ওয়েব কীভাবে কাজ করে?
হাসান স্যার: আমরা যদি কোন ওয়েবসাইট দেখতে চায় তাহলে সার্ভার থেকে তথ্যগুলো ওয়েবের মাধ্যমে আমাদের ব্রাউজারে চলে আসে তখন আমরা দেখতে পাই, এভাবেই ওয়েব এবং সার্ভার কাজ করে।
হাসান স্যার: এবার তোমাদের www বা World Wide Web বা ওয়েব সম্পর্কে বলবো। ওয়েব হলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট যুক্ত সকল কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক।
হাসান স্যার: ১৯৮৯ সালের মার্চে ইংরেজ পদার্থবিদ টিম বার্নাস লি’র প্রস্তাবনা থেকেই ওয়েবের উৎপত্তি। ১৯৯৩ সালে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় ওয়েব।
নিশি: স্যার এনক্রিপশন কী?
হাসান স্যার: কম্পিউটার কোন ডাটাকে এমনভাবে পরিবর্তন করে যে অন্য একটি কম্পিউটার ছাড়া কেউ পড়তে পারে না, এটাই এনক্রিপশন।
সায়মা: স্যার আমরা আজ অনেক কিছু জানতে পারলাম।
হাসান স্যার: শুধু জানলেই হবে না এগুলো তোমাদের মেনে চলতে হবে। বুঝতে না পারলে আমাকে জানাবে আমি আবার তোমাদের বুঝিয়ে বলবো। সবাই ভালো থেকো, আজকের মতো বিদায়।
এই কনটেন্টগুলো পড়ে উত্তর করুন: সাইবার বুলিং - সুরক্ষিত সাইবার জগৎ - ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি - ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ...