ডিজিটাল আইন
ডিজিটাল আইন
দেশের ডিজিটাল আইন কেন জানা দরকার তা ব্যাখ্যা করছেন স্কুলের আইসিটি শিক্ষক রাকিব হাসান। জনগণকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতেই তৈরি করা হয়েছে এই আইনগুলো।
নবম শ্রেণীতে পড়ে নিশি, সায়মা, মাইশা, সামি এবং শাহানসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী। স্কুলের আইসিটি শিক্ষক রাকিব হাসান। তিনি ক্লাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন নিয়ে কথা বলছেন।
হাসান স্যার: কেমন আছো তোমরা?
নিশি: ভালো আছি স্যার আপনি কেমন আছেন?
হাসান স্যার: আমি ভালো আছি। আজ আমি তোমাদের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন নিয়ে কথা বলবো। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ করতে দুইটি আইন আছে। এগুলো হলো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ।
নিশি: সাইবার ক্রাইম কি স্যার?
হাসান স্যার: কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোন
বেক্তির, গোষ্ঠীর, দেশের সম্পদের ক্ষতিসাধন এর উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত অপরাধকে সাইবার
ক্রাইম বলে।
সামি: স্যার, কোন অপরাধগুলোকে সাইবার অপরাধগুলো বলা হয়?
হাসান স্যার: সাইবার বুলিং, হ্যাকিং, স্প্যামিং, গোপনীয়তা লঙ্ঘন, মিথ্যা সংবাদ
প্রচার, গুঁজব রটানো, তথ্য পরিবতন, অশালীন কথা বলা . . .
হাসান স্যার: . . .আপত্তিকর লিংক শেয়ার করা, ধর্মকে বিদ্রূপ করা, সহিংস উগ্রবাদী তৎপরতাসহ রাষ্ট্রবিরোধী যেকোনো কাজ করাকে সাইবার অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। সাইবার অপরাধ এবং এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে তোমাদের জানতে হবে, সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
সামি: কিন্তু স্যার আমরাতো স্কুলের শিক্ষার্থী, আইনের জটিল বিষয়গুলো আমাদের কি
কাজে আসবে?
হাসান স্যার: তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই
আমরা যেন সাইবার অপরাধ এর শিকার না হই বা নিজেরা অপরাধে জড়িয়ে না পড়ি সেই জন্য তোমাদের
আইন জানতে হবে।
হাসান স্যার: আইন জানলে তোমরা সাইবার অপরাধ থেকে মুক্ত থাকবে, প্রতিরোধও করতে
পারবে। একজন সু-নাগরিক আইন মেনে চলে।
মাইশা: স্যার আমাদের সহজ করে আইনটি বুঝিয়ে বলুন।
নিশি: জ্বী স্যার, আমরা আইন জানতে চাই, আইন মেনে চলতে চাই।
হাসান স্যার: অনলাইনে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, ছবি বা ভিডিও আপলোড করা বেআইনি কাজ। অনেকে নিজের পরিচয় গোপন করে অপরাধমূলক কাজ করতে পারে, কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তাকে বের করা খুব কঠিন কাজ না; কারণ আসল পরিচয় খুঁজে তাকেও দায়ী করা যেতে পারে।কাউকে হুমকি দেয়া, অশালীন কথা বলা, আপত্তিকর লিংক শেয়ার করা আইনত অপরাধ। ভুয়া নিউজ, গুজব, প্রোপাগান্ডা বা দেশবিরোধী কাজ করাও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মেধাসত্ত্ব লঙ্ঘন করে কারো লেখা, অডিও, ভিডিও এবং সফটওয়্যার ডাউনলোড করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অবৈধ। কম্পিউটার সিস্টেমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ, তথ্য চুরি করলে, নষ্ট করলে, ক্ষতি করলে, হ্যাক করলে, ভাইরাস ছড়ালে আইন লঙ্ঘন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালে কঠিন শাস্তির বিধান আছে। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী কাজ করলে বা জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়ানো গুরুতর অপরাধ। ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোন কিছু প্রচার করলে আইনে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।
সামি: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা বলতে কি বোঝানো হয়েছে স্যার?
হাসান স্যার: কোনো ধর্মকে বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করে পোস্ট দিলে বা ছবি-ভিডিও আপত্তি
কর এডিট করে আপলোড করলে ধর্মপ্রাণ মানুষ আহত হয়। এটাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা।
সামি: স্যার কয়েকটা উদাহরণ দিলে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো।
হাসান স্যার: সম্প্রতি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করে ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের রামু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একই উপায়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা, গুজব কিংবা ফেক নিউজ শেয়ার করাও অপরাধ। তোমাদের এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। ইন্টারনেটে সহিংস উগ্রবাদী প্রচার প্রচারণা চালানো এবং নিষিদ্ধ উগ্রবাদী দলের জন্য কর্মী সংগ্রহ করাও গুরুতর অপরাধ। আরো জেনে রাখো, কোনো ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বেআইনিভাবে অর্থ লেনদেন করাও অপরাধ। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় তথ্য বিনা অনুমতিতে ডিজিটাল মাধ্যমে ধারণ করাও আইনত অপরাধ।
সায়মা: যে অপরাধের কথা আলোচনা করলেন তাতে কি ধরনের শাস্তি হতে পারে?
হাসান স্যার: এক এক অপরাধের শাস্তি এক এক রকম। এখানে তিন বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড
এবং তিন লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
নিশি: যদি কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হয় তাহলে তার কি করা উচিত?
হাসান স্যার: সাথে সাথে অভিভাবক বা শিক্ষককে বলতে হবে। তাদের সাহায্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি করতে পারো।
নিশি: স্যার না জেনে এমন অনেক কাজই আমরা করি। এখন থেকে সতর্ক থাকবো।
সায়মা: আপনার কাছে অনেক কিছু জানতে পারি, ধন্যবাদ স্যার।
সামি: স্যার এতো অপরাধ আর শাস্তির কথা শুনে আমার তো ভয় লাগছে।
হাসান স্যার: সুনাগরিক হলে আর আইন মেনে চললে ভয়ের কোন কারণ নেই। আমি আশা করবো তোমরা সবাই আইন মেনে চলবে।
সাইবার জগতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে জনগণকে ডিজিটাল জগতে নিরাপত্তা প্রদান করার ...