মিথ্যা খবর ও গুজব
মিথ্যা খবর ও গুজব
সামি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের নিউজ পায়। কিন্তু কোন নিউজটি সে বিশ্বাস করবে আর কোন নিউজটি সে রিপোর্ট করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। শাহীন তাই তাকে সাহায্য করছে।
সামি স্কুল ছুটির পর ক্যাফে ইলেভেনে আড্ডা দিতে আসে। মাইশা
ও নিশিরও আসার কথা কিন্তু তারা এখনো আসেনি। সময় কাটানোর জন্য সামি মোবাইল ফোনে
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাউজ করছে।
সামি:
ওহ্!
দিনটা কি বোরিং,
কেউ আসছে না।
একা একা বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
হঠাৎ সোশ্যাল
মিডিয়ায় একটা নিউজ দেখে সামি চমকে ওঠে।
সামি:
সারা দেশে লবনের
সংকট দেখা দিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লবনের দাম। লবন কিনতে দোকানে ভীড় করেছে
সাধারণ মানুষ।
এমন সময় মাইশা আর নিশি ক্যাফেতে আসে।
মাইশা: কিরে সামি এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিস?
সামি:
লবনের নিউজটা
দেখেছিস? দেশে লবনের সংকট দেখা দিয়েছে।
নিশি: হ্যাঁ, এই নিউজটা ভাইরাল হয়েছে। ভাবছি বাসায় যাওয়ার আগে, মাকে একবার জিজ্ঞেস করবো, লবন কিনবো কি না?
কিছুক্ষণ পর নিশির বড় ভাই শাহীন
ক্যাফেতে আসে।
শাহীন:
তোমরা কেমন আছো?
তোমাদের বেশ উত্তেজিত
মনে হচ্ছে? কী হয়েছে?
সামি:
ভাইয়া,
আপনি কি লবনের
ভাইরাল নিউজটা দেখেছেন?
শাহীন: হ্যাঁ, দেখেছি। কিন্তু এটাতো ভুয়া খবর, গুজব কোনো সুযোগ-সন্ধানী গোষ্ঠী গুজব ছড়িয়ে স্বার্থ উদ্ধার করছে।
সামি:
গুজব? তাহলে এতো লোক কেন লবন কিনতে ছুটছে?
শাহীন: তোমরা কি সবাই শামসুর রহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতাটি পড়েছো? “ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে“। যেখানে কান নিয়েছে চিলে বলে গুজব ছড়ানো হয়। গুজব হলো মিথ্যা, ভুল ও অসঙ্গত তথ্যের প্রচারণা। গুজব কখনোই যুক্তি নির্ভর বা বস্তুনিষ্ঠ হয় না।
সামি:
গুজব কীভাবে
ছড়ায়?
শাহীন:
গুজব নানাভাবে ছড়ায়। তবে বর্তমানে সোসাল মিডিয়া,
ফেসবুকসহ কিছু কিছু নিউজ পোর্টালে ভুয়া নিউজ হিসেবে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ফেসবুক
পোস্ট আর ইনবক্সের মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সামি:
গুজব ছড়ানোর
সাম্প্রতিক কোন ঘটনার উদারণ কি দিতে পারবেন?
শাহীন:
হ্যাঁ, তোমরা শুনেছ যে
কিছুদিন আগে ‘পদ্মা সেতু বানাতে মানুষের মাথা লাগবে’বলে একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো।
সামি:
তারপর কী হলো
ভাইয়া?
শাহীন:
তারপর সারা দেশে
ছেলেধরা সন্দেহে বেশ কয়েকজন নিরপরাধ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।
সামি:
গুজবের আরো কিছু
উদাহরণ কী দিতে পারবেন ?
শাহীন: ‘চাঁদে নাকি কারো মুখ দেখা গেছে’ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিখোঁজ’ ‘হারপিক দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ’ গুজবের এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবেও গুজব ছড়ানো হয়। সেইসব গুজবের ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ফেসবুকে গুজবের কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ও মন্দির হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। একইভাবে ২০১২ সালে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ বসতি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ভোলার বোরহানুউদ্দিনে ফেসবুক মেসেজকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন প্রাণ হারায়। কুমিল্লার হোমনা, পাবনার সাঁথিয়া, সাতক্ষীরার ফতেহপুরে এমন গুজব থেকেই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত দেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে যতগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সব কিছুর মূলে আছে ভুয়া নিউজ, গুজব। অনেক সময় জাতীয় পরীক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব তুলে ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমেটাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ চক্র।
মাইশা:
কিন্তু ভাইয়া
মানুষ কেন গুজব ছড়ায়?
শাহীন: ১৯৪৭ সালে গুজব নিয়ে গবেষণা করে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী গর্ডন অলপোর্ট এবং লিও পোস্টম্যান The Psychology of Rumor বইতে গুজব রটানোর কিছু কারণ উল্লেখ করেন। মানুষ কোনো বিযয়ে পুরোপরি নিশ্চিত না হলে, উদ্বেগ অনুভব করলে, তথ্যটি তার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কোনো তথ্যে না জেনে বিশ্বাস করলে, কারো সেলফ ইমেজ বা সামাজিক অবস্থানকে কোনোভাবে সহায়তা করলে সে গুজব ছড়ায়।
মাইশা:
ভাইয়া তাহলে ফেক
নিউজ জিনিসটা কী?
শাহীন: কিছু সত্য আর কিছু মিথ্যা তথ্য কিংবা পুরোটাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে তৈরি করা হয় ভুয়া বা ফেক নিউজ। ছবি-ভিডিও এডিট করেও ভুয়া নিউজ তৈরি করা হয়।
মাইশা:
ফেক নিউজ আর
গুজব কেন ছড়িয়ে পড়ে?
শাহীন: অনেকেই ভুয়া নিউজ আর গুজব বুঝতে, ধরতে পারে না। তারা সরল বিশ্বাসে তা শেয়ার করে। এভাবে ফেক নিউজ আর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
মাইশা: ভুয়া নিউজ কীভাবে যাচাই করতে হয় ভাইয়া?
শাহীন: নিউজের উৎস ও সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা করবে, শিরোনাম লক্ষ্য করবে, ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম ও ইউআরএল সঠিক কি না তা লক্ষ্য করবে। এছাড়াও অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে এই নিউজ প্রকাশিত হয়েছে কি না তা যাচাই করবে। যদি এগুলো না পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে নিউজটি ভুয়া।
নিশি: ফেক নিউজ আর গুজব থেকে মুক্ত থাকবো কীভাবে?
শাহীন: বিভ্রান্তি বা দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করার আগে অবশ্যই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নেবে। জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম, নির্ভরযোগ্য উৎস ছাড়া অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমের নিউজ বিশ্বাস করবে না। একটা কথা মনে রাখবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর দেখলে শেয়ার করবে না বরং রির্পোট করবে, যেনো অন্যরা প্রতারিত না হয়। কোনো কিছু শেয়ার করার আগে একটু যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবে। তোমার ছোট্ট একটা শেয়ারে অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটে যতে পারে। মনে রেখো আইনে বলা আছে, ভুয়া নিউজ এবং গুজব শেয়ার করা অপরাধ। গুজব ছড়ালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কঠোর শাস্তি হতে পারে।
সামি: আচ্ছা ভাইয়া আমার আরও কিছু বিষয়
জানার ছিল। ভুয়া তথ্য আর প্রপাগান্ডা মানে কী?
শাহীন: সামি, আজ আমার একটু কাজ আছে, আজ উঠতে হবে, আগামী দিন এই সময়ে চলে এসো তখন বুঝিয়ে বলবো। তোমরা ভালো থেকো।
মাইশা: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, ভালো থাকবেন।
ভুয়া নিউজ ও
গুজব প্রতিরোধে আমাদের-
করণীয়
কোনো নিউজ সত্য কি না যাচাই করবো।
নিউজের উৎস যাচাই করবো।
খবরের শিরোনাম লক্ষ্য করবো।
নিউজের সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা করবো।
কোনো নিউজ যুক্তিনির্ভর বা বস্তুনিষ্ঠ কি না তা যাচাই করবো।
ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম ও ইউআরএল পরীক্ষা করবো।
কোনো কিছু শেয়ার করার আগে চিন্তা করবো।
বর্জনীয়
ভুয়া নিউজ শেয়ার করবো না বরং রির্পোট করবো।
গুজবে বিশ্বাস করবো না।
উগ্রবাদী প্রচারণায় নিজেকে জড়াবো না।
ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক নিউজ বিশ্বাস করবো না।
সহিংস সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়বো না।
অপ্রচলিত কোনো নিউজ মাধ্যমের খবর যাচাই না করে বিশ্বাস করবো না।
ইন্টারনেট এখন বিভিন্ন ধরনের নিউজ পোর্টালে সয়লাব। আর মানুষ তার নিউজ খুঁজে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন নিউজের থাকে ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডা। ...
জানার আছে অনেক কিছু
![সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (প্রাথমিক)](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581334946_card-green-bg 1.png)
![সুরক্ষিত সাইবার জগৎ (উন্নত)](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581334970_card-purple-bg 2.png)
![ইনফরমেশন লিটারেসি](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581335223_card-bg1.png)
![ডিজিটাল আইন](/uploads/files/courses-contents/thumbimage/1581335319_web15-13.png)