ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা
ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা
নিশি, সায়মা, মাইশা ধর্মীয় সহনশীলতা সম্পর্কে শুনেছে, কিন্তু এ সম্পর্কে তাদের কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই। তাই যখন মামুন স্যার এই নিয়ে কথা শুরু করলেন তখন সবাই খুব খুশি হয়।
নবম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার ক্লাস
চলছে। ক্লাসে আছেন নিশি, সায়মা, মাইশা, সামি এবং শাহানসহ অনেক শিক্ষার্থী। ক্লাস টিচার মাওলানা
মোহাম্মাদ মামুনুল হক আজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও সহনশীলতা নিয়ে কথা বলছেন।
শিক্ষার্থী: আসসালামু আলাইকুম স্যার, আপনি কেমন আছেন?
মামুন স্যার: ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
শিক্ষার্থী: আমরাও ভালো আছি স্যার।
মামুন স্যার: আজ আমি তোমাদের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সহনশীলতা নিয়ে আলোচনা
করবো।
সামি: ধর্মীয় বিশ্বাস ও সহনশীলতা কী স্যার?
……………………………….
মামুন স্যার: ধর্মীয় বিশ্বাস হলো কোনো না কোনো ধর্মের প্রতি মানুষের
বিশ্বাস। অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে।
মামুন স্যার: সব ধর্মের বিশ্বাসীদেরই সমাজ ও রাষ্ট্রে সমান অধিকার আছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মানুষকে
অশ্রদ্ধা করা অন্যায়। এটাই সকল ধর্মের শিক্ষা।
সামি: ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলুন স্যার।
মামুন স্যার: প্রতিটি মানুষ তার পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে
পারবে। তার এই পছন্দকে
শ্রদ্ধা করাই হলো ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ।
……………………………….
মামুন স্যার: সমাজে সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্নভাবে বসবাস নিশ্চিত
করতে হবে ও সকলের ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সামি: অন্য ধর্মের মানুষেরা যদি তাদের ধর্ম পালন করতে না পারে
তাহলে ব্যাপারটা তো খারাপ হবে তাই না স্যার?
মামুন স্যার: সমাজে এর ফলাফল অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এতে বিভিন্ন
ধর্মের মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
……………………………….
মামুন স্যার: অনেক সময় এর মাধ্যমে সহিংস উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ে। হিংসা, হানাহানি, মারামারি ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমাদের ধর্মীয় সহনশীলতা অর্জন করতে হবে।
নিশি: ধর্মীয় সহনশীলতা জিনিসটা কী স্যার?
মামুন স্যার: ধর্মীয় সহনশীলতা হলো অন্যের
ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার আচরণ, সংস্কৃতিকে সহ্য
করার ক্ষমতা।
মামুন স্যার: ধর্মীয় সহনশীলতা হলো, সব ধর্মের লোকেরা যেনো স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না, বাধা দেবে না। এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা।
……………………………….
মামুন স্যার: একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট হলো বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাধীনভাবে একে অন্যের বিশ্বাস ও
সংস্কৃতি পালন করতে পারবে। তাহলেই একটি সমতা ভিত্তিক ন্যায়পরায়ন সমাজ আমরা
প্রতিষ্ঠার করতে পারবো।
মামুন স্যার: ধর্ম পালনের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি
করা চলবে না, এতে অন্যের ব্যক্তি
স্বাধীনতার ক্ষতি হতে পারে।
মামুন স্যার: আমাদের দেশে ধর্মীয় সহনশীলতার চমৎকার উদাহরণ আছে। সকল মানুষের
অংশগ্রহণে ঈদ, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা ও বড়দিনের মতো ধর্মীয় উৎসবগুলো আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
নিশি: কিন্তু স্যার আমরা তো প্রায়ই ধর্মীয় সহিংসতার কথা শুনি।
……………………………….
মামুন স্যার: তুমি ঠিকই বলেছো। সাম্প্রতিক এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের ধর্মীয় সহনশীলতার বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
সায়মা: কিন্তু স্যার দিনাজপুরে হিন্দু মন্দিরে বোমা হামলা, পঞ্চগড়ে হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা, পাবনা ও দিনাজপুরে খ্রিষ্টান যাজকের ওপর সহিংস হামলা,
সায়মা: ঢাকায় শিয়া মিছিলে ও শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে হামলার ঘটনা অতীতে ঘটেছে। এছাড়াও ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তি
ও উপাসনালয়ের ওপর আরো কিছু বেশ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
স্যার: হ্যাঁ, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষদের ঘটানো এমন বিচ্ছিন্ন কয়েকটি
ঘটনায় আমাদের ধর্মীয় সহনশীলতার ঐতিহ্য নষ্ট হবে না।
……………………………….
মামুন স্যার: ইউরোপ আমেরিকার
কোনো কোনো দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন কি
সেখানে কালো মানুষেরা সাদা মানুষদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
মামুন মামুন স্যার: শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা দুনিয়া জুড়েই অন্য ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস বা জাতির লোকজনের ওপর ঘৃণা-জনিত অপরাধ বা হেইট ক্রাইম বৃদ্ধি পেয়েছে।
মায়শা: ঘৃণা-জনিত অপরাধ বা হেইট ক্রাইম কী স্যার?
মামুন স্যার: কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি ভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের প্রতি ঘৃণা ধারণ করে তাকে কোনোভাবে আক্রমণ বা আঘাত করে সেটাই হলো হেট ক্রাইম। অথছ কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা করার
কথা বলে না।
……………………………….
মায়শা: তাহলে হেইট ক্রাইম থেকে আমরা কীভাবে মুক্ত থাকবো স্যার?
মামুন স্যার: সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হবে, অন্য ধর্মের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে হবে।
সায়মা: হেইট ক্রাইম থেকে মুক্ত থাকা বা ধর্মীয় সহনশীলতা অর্জনের
জন্য আমরা আরও কিছু করতে চাই স্যার।
মামুন স্যার: তাহলে তোমাদের প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হবে।
……………………………….
মাইশা: তাহলে কেন ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো হয়? এটা যারা করে তাদের উদ্দেশ্য কী?
মামুন স্যার: ধর্ম রক্ষা বা ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে অনেক
উগ্রবাদী সংগঠন সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে। এজন্য তারা বিভিন্ন ভুয়া প্রপাগাণ্ডা চালায়।
মামুন স্যার: আসলে যতটা না ধর্ম রক্ষা তার চেয়েও এর পেছনে রয়েছে জটিল
জাতীয় আন্তঃর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণ।
মামুন স্যার: ধর্মপ্রাণ মানুষ রাজনীতির এই জটিলতা বুঝতে পারে না। তারা
সরল বিশ্বাসে ভুয়া প্রপাগান্ডা বিশ্বাস করে এবং ভুল পদক্ষেপ নেয়।
……………………………….
মামুন স্যার: উগ্রবাদী দলগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনভূতিকে কাজে
লাগিয়ে সহিংস উগ্রবাদী কাজে যুক্ত করে ভুল পথে চালিত করে।
মামুন স্যার: সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ অসংখ্য দেশ উগ্রবাদী সহিংসতার কারনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
সায়মা: এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী স্যার?
মামুন স্যার: অন্য ধর্মের মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাদের বিশ্বাসের সাথে একমত না
হলেও, তাদের বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল হতে হবে।
নিশি: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার আজ আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অর্জনের জন্য অপরিহার্য হলো পারস্পরিক সহনশীলতা। একীভূত সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে সহনশীলতা চর্চার নেই কোনো ...