সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা

পরীক্ষার ঠিক আগে ডিম খেলে সামি পরীক্ষার খাতাতেও ডিম পাবে মনে করে সে ডিম খেতে চাচ্ছে না। তার এই ভুল ধারণা পরিবারের সবাই মিলে বদলে দিল।                                                                                                                                           


সামির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এসময় পড়ালেখার বেশ চাপ। সন্ধ্যা থেকে লেখাপড়ার পর সামি এখন রাতের খাবার খেতে বসেছে। খাবার টেবিলে সামির মা, বাবা, ছোট বোন এবং দাদু রয়েছেন।

 

দাদু: দাদু ভাই, তোমার পরীক্ষা আর পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?

 

সামি: পরীক্ষা ভালো হচ্ছে দাদু ভাই। পড়াশোনাও ভালো যাচ্ছে। রেজাল্ট ভালো করলে আমাকে কী দেবে দাদু?


দাদু: তুমি যা চাইবে তাই দেবো। বলো কী চাও?


সামি: আমাকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে হবে তাহলে। বলো দেবে তো?


দাদু: যদি ক্লাসের প্রথমদিকে থাকতে পারো তাহলে অবশ্যই কিনে দেবো।

 

মা: সামি, এই ডিম সেদ্ধটা খাও। পরীক্ষা দিচ্ছো, শরীরে পুষ্টি পাবে।


সামি: সর্বনাশ, আম্মু তুমি কি জানো না যে পরীক্ষার আগে ডিম সেদ্ধ খেতে নেই।


মা: কিন্তু কেনো? কী হবে ডিম সেদ্ধ খেলে?


সামি: পরীক্ষার সময় ডিম সেদ্ধ খেলে রেজাল্টে ডিমের মতো গোল্লা পাবো।

 

মা: বাবা এটাতো কুসংস্কার, তুমি এই যুগের মানুষ হয়ে এগুলো কী বলো?


সামি: কি করবো, বন্ধুরা তো সবাই তাই করে। পরীক্ষার আগে এক আধটু কুসংস্কার বিশ্বাসে ক্ষতি নেই।

 

দাদু: সবাই কুসংস্কার অন্যের কাছ থেকেই শুনে বিশ্বাস করে। এটা এক ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি, যা যাচাই-বাছাই না করেই অনেকে গ্রহণ করে

সামি: তাহলে আমি কী করবো? কুসংস্কার অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক হয়। আবার এর কোন বাস্তব ভিত্তি থাকে না, তাই তুমিও বিশ্বাস করবি না।


সামি: এধরনের আরও কয়েকটা কুসংস্কার সম্পর্কে বলো না

 

দাদু: বলছি, যেমনঃ ডান হাতের তালু চুলকালে নাকি টাকা আসে, দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নেই, কেউ যাত্রা পথে পিছন থেকে ডাকলে নাকি বিপদ হয়, কালো বিড়াল সামনে দিয়ে গেলে তা অশুভ, এগুলো সবই কুসংস্কার


সামি: কুসংস্কার কীভাবে আসে দাদু?


দাদু: স্টেরিওটাইপ বা ধরাবাঁধা চিন্তা এবং ক্ষতিকর সামাজিক অনুশাসন থেকে কুসংস্কার আসতে পারে।


সামি: বুঝতে পারিনি দাদু। একটু বুঝিয়ে বলো।

 

দাদু: কোনো জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, এলাকা, এবং লিঙ্গের ভিন্নতার কারণে কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেওয়া অনড়, ভুল এবং অযৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বলে স্টেরিওটাইপ বা ধরাবাঁধা চিন্তা। ফর্সা মানেই সুন্দর, কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষ খারাপ, মেয়েরা দুর্বল, কোন নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মানেই  উগ্রপন্থী, এমন অনেক চিন্তাহীনভাবে বাঁধাধরা চিন্তার উদাহরণ হিসেবে দেয়া যাবে


সামি: আমরা কীভাবে এই ধরাবাঁধা চিন্তা থেকে বের হতে পারবো?


দাদু: যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে, নিজের বিশ্বাসের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে, অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।

 

সামি: তাহলে তুমি যে বললে সামাজিক অনুশাসন, সেটা কী?


দাদু: সব সমাজেই এমন কিছু অলিখিত প্রথা, রীতিনীতি, নিয়ম কানুন, আচার আচরণ বা বিশ্বাস থাকে, যা নির্ধারণ করে ঐ সমাজে আমাদের কোন কাজটি সঠিক আর ভুল। অনেকদিন ধরে চলে আসা কোনো আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, বিশ্বাস অথবা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সাধারণ জনগণ বিনা প্রশ্নে যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে সেটাই সামাজিক-সংস্কৃতিক অনুশাসন। যেমন ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের সম্মান করা, গুরুজনদের কথা শোনা, শিক্ষককের সাথে দেখা হলে সালাম দেয়া, এগুলো সবই সামাজিক-সংস্কৃতিক অনুশাসন।

 

সামি: তাহলে এটাতো খুবই ভালো।


দাদু: সব সময় ভালো নাও হতে পারে। এমন কিছু অনুশাসন আছে যা ধরাবাঁধা চিন্তা বা কুসংস্কার হিসেবে অন্য সমাজ বা ধর্মের মানুষকে আঘাত করে। মানুষে মানুষে ঘৃণা আর বিভেদ সৃষ্টি করে। এতে করে সেই সমাজ বা ধর্মের মানুষের মধ্যে অপর সমাজ বা ধর্মের মানুষ সম্পর্কে ঘৃণা তৈরি হয় এই ঘৃণা উগ্রবাদের ভিত্তি তৈরি করে তখন সেই আঘাত প্রাপ্ত মানুষ সহিংসতায় লিপ্ত হতে পারে।


সামি: একটু বুঝিয়ে বলো দাদু। কথাগুলো কঠিন মনে হচ্ছে।

 

বাবা: যেমন- বাড়ির কাজের লোক, রিক্সাওয়ালা কিংবা বস্তির শ্রমিককে আমাদের সমাজে অনেকেই ছোট করে দেখে। এটা হলো খারাপ সামাজিক অনুশাসন বা ধরাবাঁধা চিন্তা থেকে সৃষ্ট হওয়া কুসংস্কার। যা আমরা বিনা প্রশ্নে পালন করে চলেছি। অবস্থাপন্নরা সহানুভূতির বদলে গরীব বলে যদি কাউকে ঘৃণা করে তাহলে তার মনেও তাদের সম্পর্কে ঘৃণা তৈরি হবে। এই ঘৃণা থেকে সে সহিংস উগ্রবাদের আশ্রয় নেবে, এবং কোনোভাবে ক্ষতি বা আঘাত করতে চাইবে। কাজেই মানুষে মানুষে ঘৃণার সৃষ্টি বা বিভেদ সৃষ্টি করে এই ধরনের সামজিক অনুশাসন বা ধরাবাঁধা চিন্তা আমাদের অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

 

সামি: কিন্তু কীভাবে এসব আচরণ ত্যাগ করবো?


বাবা: বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সংস্কৃতির মানুষের সাথে মিশতে হবে, তাদের আচার-আচরণ, বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আমাদের অনেক ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। নিজের আচার আচরণগুলোকে সবসময় প্রশ্ন করতে হবে; যাচাই বাছাই করতে হবে। যুক্তি এবং বিজ্ঞান দিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।


সামি: আজ আমার সামনে চিন্তার দুনিয়ার এক নতুন জানালা খুলে গেলো। আমি চেষ্টা করবো ধরাবাঁধা চিন্তা আর কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকতে। তোমরাও আমাকে সাহায্য করবে যেনো আমি এই ধরনের ভুল চিন্তাধারা থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

 

মা: এবার কি তুমি ডিম সেদ্ধটা খেতে চাও?

সামি: অবশ্যই মা। আমি আস্ত ডিম সেদ্ধটাই খেতে চাই। 

রাউন্ড ০৯ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা অন্ধভাবে অনুসরণের কিছু নয়। যুক্তি ও সাধারণ বুদ্ধি ব্যবহার করে কুসংস্কার ও অযৌক্তিক চিন্তাধারা থেকে আমাদের ...

জানার আছে অনেক কিছু

ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি পরিচয়
ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি পরিচয়

সামি ইন্টারনেটে কিছু পোস্ট করতে, শেয়ার করতে বা লাইক দিতে  অনেক চিন্তা করে। ...

আরও পড়ো
অনলাইনে যোগাযোগ ও ব্যক্তি সম্পর্ক
অনলাইনে যোগাযোগ ও ব্যক্তি সম্পর্ক

মাইশাদের বাসায় আড্ডা দিতে এসেছে নিশি আর সায়মা। তারা সবাই মিলে মোবাইলে কিছু ...

আরও পড়ো
ইনফরমেশন লিটারেসি
ইনফরমেশন লিটারেসি

ইন্টারনেটে পাওয়া সকল তথ্যই কি সঠিক? সব ওয়েবসাইটের তথ্যই কি বিশ্বাসযোগ্য? ...

আরও পড়ো
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক