শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি

শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি

পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য ছোটবেলা থেকেই প্রয়োজন সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। নিশি, শামীম আর সিয়াম এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে এসেছে  নিশির খালার সাথে দেখা করতে।                                                                                    



নিশির ছোট খালা, ড. সানজিদা চৌধুরী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তিনি শিশু-কিশোরদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে লেখাপড়া করেছেন

 

তিনি নিশির বন্ধু শামীম ও সিয়ামের সাথে দেখা করতে চেয়েছেন তাই নিশি তাদের নিয়ে খালার বাসায় বেড়াতে আসে


নিশির কাছে তিনি শামীম ও সিয়ামের উগ্রবাদে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগেই জেনেছেন যদিও তারা এখন উগ্রবাদের ফাঁদ থেকে মুক্ত

 

নিশি: খালা কেমন আছো? আমরা চলে এসেছি


খালা: আমি ভালো আছি আজ দুপুরে তোমার পছন্দের সব কিছু রান্না করেছি, তোমার বন্ধুরাও নিশ্চয়ই পছন্দ করবে!


নিশি: এরা হলো আমার বন্ধু শামীম ও সিয়াম এদের কথা তোমাকে আগেই বলেছি


খালা: হ্যাঁ, ওদের কথা আমি তোমার কাছে শুনেছি সে কারণেই দেখা করতে চেয়েছিলাম

 

খালা: শামীম ও সিয়াম তোমাদের অনেক সৌভাগ্য যে অন্ধকার পথ থেকে ফিরে আসতে পেরেছো



সিয়াম: হ্যাঁ, আমাদের সৌভাগ্য; কিন্তু অনেকেই ফিরে আসতে পারে না আমরা কি তাদের জন্য কিছু করতে পারি না?


খালা: অবশ্যই পারি তবে তার আগে তোমাদের উগ্রবাদেঝুঁকিতে পড়ার কারণগুলো জানতে হবে। একটা শিশু অসুস্থ বা অস্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে তার মধ্যে উগ্রবাদের ভিত্তি তৈরি হয়।

নিশি: এটা কীভাবে সম্ভব খালা আমাদের বুঝিয়ে বলো।

 

খালা: শিশু যখন বড় হয়, তখন চারপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে এই প্রভাব ভালো অথবা খারাপ হতে পারে যেমনই হোক এটা থেকেই শিশুর চরিত্র গঠন হয়

নিশি: আমরা আমাদের সমাজ বিজ্ঞান বইতে এ সম্পর্কে পড়েছি


খালা: সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে শিশু বেড়ে উঠলে শিশুর মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হয়। শিশু আত্মবিশ্বাসী, মেধাবী ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হওয়ার সম্বাবনা থাকে। এরা সহজেরই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে নিজের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।

 

নিশি: সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ আর অসুস্থ অস্বাভাবিক পরিবেশ বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছো খালা?


খালা: বাবা মায়ের আদর-স্নেহ-ভালোবাসা, পুষ্টিকর খাবার, খেলাধুলা, আনন্দময় শিক্ষা, নিরাপত্তা, ভয়-ভীতিহীন আনন্দময় পরিবেশ প্রভৃতি হলো শিশুর বিকাশের জন্য সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ অপরদিকে অবহেলা, অনাদর, অতিরিক্ত শাষণ, গালমন্দ, দারিদ্রতা, বঞ্চনা, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, পিতা-মাতার ঝগড়া, সুযোগ-সুবিধার অভাব, বৈষম্য প্রভৃতি হলো শিশুর জন্য অসুস্থ পরিবেশ এই পরিবেশে শিশুর মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয় বাঁধাগ্রস্ত মানসিক বিকাশের কারণে চারপাশের জগতের সাথে শিশু যৌক্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না ফলে চারপাশের জগতের সাথে তার সংঘাত সৃষ্টি হয়

 

 

 

নিশি: শিশু যদি সুস্থ-অস্বাভাবিক পরিবেশে বড় হয় তাহলে কী হতে পারে?

খালা: অসুস্থ আর অস্বাভাবিক পরিবেশে শিশু দৈহিক বা মানসিক নিপীড়নের শিকার হয় এতে শিশু প্রচন্ড মানসিক চাপে বেড়ে ওঠে তার মেধা ও যৌক্তিক চিন্তার বিকাশ হয় না

...................................

সিয়াম: আচ্ছা খালা শিশুর মানসিক বিকাশ বাঁধা পেলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

খালা: শিমুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ বাধা পেলে তাদের মধ্যে দুইটি আচরণগত মানসিক সমস্যা দেখা যায় একটি বহির্মুখী আচরণগত সমস্যা, অন্যটি অন্তর্মুর্খী আচরণগত সমস্যা।

 

নিশি: খালা, শামীম ও সিয়ামের কী ধরনের সমস্যা আছে বলে তুমি মনে করো?

খালা: শামীম ও সিয়াম সম্পর্কে আমি যা জেনেছি তাতেই বুঝতে পেরেছি শামীম অন্তর্মুর্খী এবং সিয়াম বহির্মুখী স্বভাবের শিশুকাল থেকে তাদের মধ্যে এই স্বভাব তৈরি হয়েছে

...................................

শামীম: অন্তর্মুর্খী আচরণগত সমস্যার লক্ষণগুলো কী কী, খালা?

খালা: অন্তর্মুর্খী আচরণের লক্ষণগুলো হলো-এরা লাজুক, শান্ত ও ঠান্ডা স্বভাবের হয় সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা ও আড্ডা থেকে এরা নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে ফলে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, বিশ্বাস, প্রথা, রীতিনীতির সাথে এদের পরিচয় ঘটে না।

 

খালা: বন্ধুরা এদের উপেক্ষা করে তাই এদের বন্ধুবান্ধব কম থাকে এদের নেতিবাচক আত্মমূল্যায়ন ও আত্মবিশ্বাস কম হতে পারে এরা পরিবারে ওপর নির্ভরশীল ও সব সময় ভয় আর শংকার মধ্যে থাকতে পারে

শামীম: আপনার কথার সাথে আমার অনেক মিল আছে খালা

..................................

শামীম: অন্তর্মুর্খী আচরণগত সমস্যা যাদের আছে তারা আর কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে?

খালা: বাস্তব জগতে মিশতে না পেরে এরা কল্পনায় একটা আদর্শ জগত গড়ে সেখানে বসবাস করে যেখানে কোন অন্যায় অবিচার নেই, সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করেযা আসলে অসম্ভব 

 

খালা: এক সময় বাস্তব জগতকে এধরনের মানুষ তার কাল্পনিক জগতের মতো করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে ফলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ও প্রথার সাথে তার সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে

খালা: এই সময় সে একজন আদর্শ নায়কের চিন্তা করে, যে খারাপ লোকদের হত্যা করে তার কল্পনার আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে এক পর্যায়ে সে নিজেই সেই আদর্শ নায়ক হওয়ার চেষ্টা করে ফলে সে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে

...................................

সিয়াম: বহির্মুখী আচরণগত সমস্যার লক্ষণগুলো কী খালা?

খালা: বহির্মুখী আচরণগত সমস্যার লক্ষণগুলো হলো এরা আগ্রাসী স্বভাবের ও অতিচঞ্চল হতে পারে পিতা-মামা ও শিক্ষকের শাসন উপেক্ষা করতে পারে ভাঙচুর, মারামারি করতে পারে

 

খালা: এরা সহপাঠীদের নির্যাতন, নারীর প্রতি অবমাননা, বেপরোয়া, বিরোধপূর্ণ আচরণ করতে পারে এরা প্রথা বিরোধী ও বিদ্রোহী স্বভাবের হতে পারে

খালা: এরা সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রের যা কিছু অন্যায় বলে মনে করে সেখানেই আঘাত করতে চেষ্টা করে এই প্রবণতা থেকে এরাও উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারতে পারে

...................................

সিয়াম: খালা আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আসলে এমনই করেছি

খালা: শামীম ও সিয়াম তোমরা মন খারাপ করো না বর্হিমুখী ও অন্তর্মুখী আচরণগত সমস্যা থাকলেই যে কেউ উগ্রবাদের যুক্ত হবে; আর না তাকলে হবে না এটা সব সময় সঠিক নয় তবে উগ্রবাদে যুক্তদের অনেকেরই এই ধরনের সমস্যা থাকে

 

শামীম: এ ছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে?

খালা: পরিবারের কোন সদস্য বা কোনো আত্মীয় যদি উগ্রবাদী কোন গোষ্ঠীর সমর্থক হয়, তবে সেই পরিবারের অন্য সদস্যরাও উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে।

.....................................

খালা: সন্তানরা বাবা-মার কাছ থেকে যদি যথেষ্ট মনোযোগ না পায় তাহলে সন্তান ক্ষোভের কারণে বা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য উগ্রবাদী কার্যকলাপে যুক্ত হতে পারে।

খালা: সমাজে যদি সুযোগ সুবিধার বৈষম্য থাকে এবং কোনো গোষ্ঠী যদি বিশেষ সুযোগ সুবিধা পায় তাহলে সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর প্রতি সুবিধাহীন গোষ্ঠীর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। তখন প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা উগ্রবাদে জড়িত হতে পারে।

 

খালা: একটা সমাজে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, বিশ্বাস, প্রথা, রীতিনীতি থাকে। এর সাথে পরিচয় না থাকলে তাদের প্রতি সম্মানবোধের সৃষ্টি হয় না। এটা থেকেও উগ্রবাদের সৃষ্টি হতে পারে।


খালা: ‌‌’আমার বিশ্বাসই সঠিক অন্যরা ভুল’ এই ধরনের একতরফা দৃষ্টিভঙ্গির কারনেও উগ্রবাদী চিন্তার বিস্তার হতে পারে।


সিয়াম: বহির্মুখী ও অন্তর্মুর্খী আচরণগত সমস্যা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই খালা? আমরা কি এই সমস্যা থেকে কখনোই মুক্ত হতে পারবো না?



খালা: অবশ্যই মুক্ত হতে পারবে, সেই উপায় আছে তার আগে চলো আমরা খেয়ে নেই, খাবারগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে খাওয়ার পর আমরা আমাদের কথা এগিয়ে নিয়ে যাবো



নিশি: অনেক আলোচনা হলো এবার সবাই মিলে খাবো, আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে


রাউন্ড ১৭ শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি

মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতা থেকে কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন অনুকূল ...

জানার আছে অনেক কিছু

অনলাইনে যোগাযোগ ও ব্যক্তি সম্পর্ক
অনলাইনে যোগাযোগ ও ব্যক্তি সম্পর্ক

মাইশাদের বাসায় আড্ডা দিতে এসেছে নিশি আর সায়মা। তারা সবাই মিলে মোবাইলে কিছু ...

আরও পড়ো
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা

পরীক্ষার ঠিক আগে ডিম খেলে সামি পরীক্ষার খাতাতেও ডিম পাবে মনে করে সে ডিম ...

আরও পড়ো
ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা
ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা

নিশি, সায়মা, মাইশা ধর্মীয় সহনশীলতা সম্পর্কে শুনেছে, কিন্তু এ সম্পর্কে ...

আরও পড়ো
অনলাইনে উগ্রবাদ ও সহিংসতা (আচরণগত পরিবর্তন)
অনলাইনে উগ্রবাদ ও সহিংসতা (আচরণগত পরিবর্তন)

সিয়াম কিছুটা বদলে গেছে। হঠাৎ এই পরিবর্তন সামি ও মাইশার চোখে পড়ে। তারা ...

আরও পড়ো
শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও