অনলাইনে উগ্রবাদ ও সহিংসতা (আচরণগত পরিবর্তন)
অনলাইনে উগ্রবাদ ও সহিংসতা (আচরণগত পরিবর্তন)
সিয়াম কিছুটা বদলে গেছে। হঠাৎ এই পরিবর্তন সামি ও মাইশার চোখে পড়ে। তারা সিয়ামকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
নবম শ্রেণির ছাত্র সিয়ামের হঠাৎ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সে বন্ধুদের
সাথে আগের মতো মেলামেশা করে না, খেলাধুলা করে না, লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই।
অপরিচিত মানুষজনের সাথে চলাফেরা করে। হঠাৎ
করেই সে অতি ধার্মিক হয়ে গেছে। সামি
ও মাইশা সিয়ামের এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে। তারা
ঠিক করে সিয়ামের সাথে কথা বলবে।
সামি: মাইশা লক্ষ্য করেছিস সিয়ামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের
সাথে আগের মতো মেলামেশা করে না।
মাইশা: হ্যাঁ, খেয়াল করেছি। নতুন
কিছু মানুষজনের সাথে ঘোরাফেরা করে। এবার
পরীক্ষাতে রেজাল্টও খারাপ করেছে।
..........................................
সামি: সিয়াম মনে করে ও যা জানে সেটাই ঠিক, অন্যরা
ভুল। প্রায় বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক
বিতর্ক করার নামে ঝগড়া করে।
মাইশা: স্কুলে ও একা একা আর চুপচাপ থাকে। কারো
সাথে মেশে না। আমাদের সাথেও কথা বলে না।
সামি: ওর চলাফেরা কেমন যেনো রহস্যময়। মনে
হয়, কী যেন গোপন করছে!
মাইশা: আমার মনে হয় ওর সাথে আমাদের কথা বলা উচিত।
........................................
সামি: ওই তো সিয়াম যাচ্ছে, ওকে ডাকি। এই সিয়াম, এদিকে শোন, তোর সাথে কথা আছে।
সিয়াম: আমি ব্যস্ত আছি, জরুরি কাজ আছে। এখন
কথা বলতে পারবো না।
মাইশা: একটু দাঁড়া সিয়াম। তোর
সাথে আমাদেরও জরুরি কথা আছে।
সিয়াম: ঠিক আছে, যা বলার তাড়াতাড়ি বল। হাতে
বেশি সময় নেই। একজনের সাথে দেখা করতে হবে।
........................................
মাইশা: তুই অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিস কেন সিয়াম?
সিয়াম: আমি বেপর্দা মেয়েদের দিকে তাকাই না, কথাও
বলতে চাই না। ধর্মের বিধান
অনুযায়ি তোর পর্দা করা উচিত।
মাইশা: আমি ধর্মের বিধান মানি না? তুই একথা বলতে
পারলি!
সিয়াম: ধর্ম সম্পর্কে তোরা ভুল জানিস। সঠিকটা
আমার জানা আছে। আমি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারি।
......................................
মাইশা: তোর কথা শুনে আমার রাগ হচ্ছে। তোর
সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
সামি: রাগ করিস না মাইশা মাথা ঠাণ্ডা কর। আচ্ছা
সিয়াম ধর্মের এই তথাকথিত সঠিক ব্যাখ্যা তুই কোথা থেকে জানতে পারলি? আমাদের একটু বলবি?
সিয়াম: অবশ্যই বলতে পারি। আমি
আদিল ভাইয়ের কাছে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে পেরেছি। তার
পরামর্শ মতো এখন আমি ধর্মের পথে চলি।
সামি: আচ্ছা এই আদিল ভাইটা কে? আগে তো কখনো তার
নাম শুনিনি তোর কাছে।
.......................................
সিয়াম: তিনি অনেক লেখাপড়া করেন। অনেক
কিছু জানেন, বোঝেন। খুবই
মেধাবী মানুষ। ধর্ম বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান।
সিয়াম: আদিল ভাইয়ের সাথে আমার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। ধর্ম
বিষয়ে তিনি আমার সাথে অনেক আলোচনা করেছেন।
সামি: ধর্মের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে? আমি জানতে
চাই।
সিয়াম: তিনি বলেছেন যে, সারা দুনিয়ায় আমাদের ধর্মের
ভাইয়েরা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারা
অনেক কষ্টে আছেন। তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে।
.......................................
সিয়াম: তাদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচাতে ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে
হবে, ধর্মের পথে যুদ্ধ করতে হবে। ধর্মের
প্রতিটি বিধান নিষ্ঠার সাথে মেনে চলতে হবে।
সামি: ধর্মের বিধান নিয়ে তুই আমাদের ধর্ম শিক্ষক মাওলানা
মোহাম্মাদ
মামুনুল
হকের সাথে কথা বলতে পারিস।
সিয়াম: মামুনুল
হক স্যার ভুল তরিকায় আছেন। তিনি ধর্মের
অনেক কিছুই জানেন না।
সামি: বলিস কী? স্যার ধর্মের বিষয়ে জানেন
না! তাহলে তুই তোর বাবা মায়ের সাথে কথা বল।
........................................
সিয়াম: না তারাও ধর্মের প্রকৃত বিধি
বিধান জানেন না। তারাও ভুল পথে আছেন।
সামি: তাহলে বলতে চাস একমাত্র তুই আর তোর
আদিল ভাই একমাত্র সঠিক পথে আছে? অন্যরা সবাই ভুল পথে আছে?
সামি: আমি যতটুকু জানি, ‘ধর্ম সম্পর্কে নিজে যা
জানি সেটাই একমাত্র সঠিক অন্যরা সবাই ভুল’ এই ধরনের চিন্তাধারাকে
মৌলবাদী বা উগ্রবাদী চিন্তাধারা বলে। তুই
কি সেদিকেই যাচ্ছিস?
সিয়াম: আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। এবার যেতে
হবে পরে তোদের সাথে কথা বলবো।
.......................................
সিয়াম বাড়িতে কম্পিউটারের সামনে বসে আছে।
পাশে তার মা।
মা: বাবা, তোর কী হয়েছে? সারাদিন
কম্পিউটারের সামনে এতো কী করিস? তোর বোন সামিরাকে লেখাপড়ায় একটু সাহায্য করলেও তো
পারিস।
সিয়াম: মা, আগে সামিরাকে পর্দা করে
চলাফেরা করতে বলো। পরপুরুষের সাথে কথা বলতে নিষেধ করো। ওর চলাফেরা আমার ভালো লাগে
না।
মা: ঠিক আছে বলবো। আজ বিকালে তোর ছোট
খালা আসবে, বাইরে কোথাও না গিয়ে বাসায় থাকিস।
সিয়াম: ছোট খালা পর্দা করে না। বেপর্দা
হয়ে চলাফেরা করে, ধর্মের বিধান মানে না। আমি তার সাথে দেখা করতে চাই না।
.......................................
মা: তোর কী হয়েছে? আত্মীয় স্বজন সবাইকে
কেন এড়িয়ে চলিস? তারা সবাই তোর আপনজন।
সিয়াম: আত্মীয় স্বজন এসব আমি বুঝি না।
যারা ধর্ম বিরোধী তাদের আমি এড়িয়ে চলি।
মা: আমরা ধর্ম বিরোধী? আমরা ধর্মের বিধান
মানি না? কোথা থেকে এসব শিখেছিস?
সিয়াম: আমার এক বড় ভাই আমাকে এসব বলেছে।
আমরা ধর্মের প্রকৃত নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
.....................................
মা: ধর্মের নিয়ম কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবি?
আমাকে একটু খুলে বলতো?
সিয়াম: আমাদের সমাজে কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা
নেই। সমাজে আর রাষ্ট্রে নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর জন্য ধর্মযুদ্ধে অংশ
নিতে হবে।
মা: তোর মাথাটা একেবারেই গেছে। তোকে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
সিয়াম: যা বোঝো না সেটা নিয়ে কথা বলো না।
আমি একটু বাইরে যাবো আসতে দেরি হবে।
....................................
সিয়াম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এই সময়
তার আবার সামির সাথে দেখা হয়।
সামি: এই সিয়াম কোথায় যাচ্ছিস? তোর বাসায়
যাচ্ছিলাম। তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
সিয়াম: আমি ব্যস্ত আছি, কথা বলার মতো সময়
হাতে নেই।
সামি: তোর আদিল ভাই, আজ পুলিশের হাতে ধরা
পড়েছে। সে একটা সহিংস উগ্রবাদী দলের সদস্য। ধর্মপ্রাণ ছেলেদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে
উগ্রবাদী দলে যুক্ত করা ছিলো তার কাজ। উনি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে বিভিন্ন
জায়গা থেকে টাকা পেতেন, ধর্মের জন্য কাজ করা কখনোই তার উদ্দেশ্য ছিল না।
সিয়াম: সর্বনাশ, আজতো আমারও দলে যোগ
দেয়ার কথা, আমি সেখানেই যাচ্ছিলাম।
..................................
সামি: তুই সহিংস উগ্রবাদী জঙ্গিদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েছিস। অল্পের জন্য তুই
রক্ষা পেয়েছিস। তোর মতো সৌভাগ্য অনেক ছেলেরই হয়নি। পুলিশের হাতে
আদিল ভায়ের সাথে আরো বেশ কয়েকজন ছেলে ধরা পড়েছে।
সিয়াম: তাহলে কি আমি সত্যিই অনেক বড় ভুল করেছি? ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছি? এর জন্য বন্ধুদের দূরে ঠেলে দিয়েছি; আত্মীয়
স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।
সামি: তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস দেখে ভালো লাগছে। এখনো সময় আছে ফিরে আয়।
সিয়াম: এবার বুঝতে পারছি আদিল ভাই ধর্ম সম্পর্কে আমাকে ভুল বুঝিয়ে নিজের
স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছিল।
.......................................
সামি: তোকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এমন ভুল আর
করিস না।
সিয়াম: তোকে অনেক ধন্যবাদ সামি, তোরাই আমার আসল বন্ধু। আত্মীয়
স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি সবার
কাছে ক্ষমা চাইবো। সবার আগে আমি আমার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবো।
উগ্রবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ার নেই কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ, কিন্তু ক্ষেত্রে বিশেষে দেখা যায় সাধারণ কিছু পরিবর্তন। এধরনের পরিবর্তন দেখলে সকলেরই ...