অনলাইনে উগ্রবাদ এড়াতে করণীয়
অনলাইনে উগ্রবাদ এড়াতে করণীয়
শামীম চায় উগ্রবাদ থেকে মুক্ত থাকার উপায়গুলো সম্পর্কে, জানতে চায় কীভাবে অন্যদের সে করতে পারে সাহায্য। শাহীন জানায় সমাজের সকলেরই সুযোগ আছে উগ্রবাদ এড়াতে অবদান রাখার।
স্কুল ছুটির পর নিশি এবং সামি তাদের বন্ধু শামীমকে নিয়ে ক্যাফে ইলেভেনে আসে।
সামি তার বড় ভাই শাহীনকে ক্যাফেতে আসতে বলেছে। তারা সবাই শাহীনের জন্য অপেক্ষা
করছে।
শামীম: ভাইয়া তো আসছে না।
আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?
নিশি: আর একটু অপেক্ষা
করি। ভাইয়া নিশ্চয় আসবে।
সামি: হয়তো কোনো কাজে আটকে
পড়েছে। এখনি চলে আসবে।
এমন সময় শাহীন ক্যাফেতে আসেন।
সামি: ওই তো ভাইয়া চলে
এসেছে।
শাহীন: কেমন আছো তোমরা?
একটু দেরি হয়ে গেলো।
নিশি: কোনো সমস্যা নেই
ভাইয়া, আপনি বসুন।
শাহীন: তোমরা কী খাবে বলো?
আমার বেশ ক্ষুধা লেগেছে।
সামি: সফট ড্রিংস আর
স্যান্ডউইচের অর্ডার দিন।
নিশি: আমি একটা বার্গার
খাবো।
শামীম: আমি শুধু কফি খাবো,
ভাই।
শাহীন: শামীম তোমার বিষয়ে
আমি সামির কাছে সব শুনেছি। তুমি যে শুধু ভুল পথে আছো তা নয় ভীষণ বিপদেও আছো।
শামীম: ভাইয়া আমি কী করবো?
আমার ভীষণ ভয় করছে।
সামি: চিন্তা করিস না,
ভাইয়া নিশ্চয়ই একটা পথ বের করবে।
শাহীন: সবার আগে তুমি সেই
আদিল ভায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করো।
শামীম: আমি আগেই আদিল ভাইয়ের
সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছি। এখন কী করবো?
শাহীন: এবার তুমি তোমার
অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে পারো।
শামীম: কিন্তু পুলিশের
কাছে গেলে যদি অন্য বিপদে পড়ি?
শাহীন: ভয়ের কিছু নেই।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করে। অপরাধ ঘটার আগেই সেটা
দমন করে এই ইউনিট।
শামীম: আমি তো রক্ষা পেলাম
কিন্তু সহিংস উগ্রবাদের বিপদে আছে এমন অসংখ্য ছেলেমেয়ের কী হবে?
শাহীন: খুব ভালো প্রশ্ন
করেছো। যদি তুমি বুঝতে পারো কেউ সহিংস উগ্রবাদের পথে অগ্রসর হচ্ছে তাহলে তার সাথে সহানুভূতিশীল
আচরণ করবে। তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে না তাহলে সে আরো রক্ষণশীল হয়ে উঠতে পারে, যা তার জন্য আরো ক্ষতিকর হবে। তাদের সাথে
আলাদা করে কথা বলো। সহানুভূতির সাথে কথা বলো যেনো সে তোমাকে বিশ্বাস করে নিজের
কথাগুলো বলে। এরপর তাকে বুঝিয়ে বলো–উগ্রবাদী চেতনা আসলে কী, এটা কেন ক্ষতিকর ও কীভাবে সে ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে। জানার চেষ্টা করো, তার কোনো
মানসিক সমস্যা আছে কি না? কেন সে এরকম মনোভাব পোষণ করতে আগ্রহী হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক
অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নাও। দরকার পড়লে আইনের সাহায্য নিতে পারো।
নিশি: তরুণদের সচেতনতার
জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কী কোন ব্যবস্থা নিতে পারে?
শাহীন: অবশ্যই পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সাম্প্রদায়িক
সম্প্রীতির গুরুত্ব ও সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা
নিয়ে তারা আলোচনার করতে পারে। ভিন্নমতকে সম্মান দেওয়া, সাম্প্রদায়িক উগ্রতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ক্ষতিকর দিক নিয়ে তারা
শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারে। গণমাধ্যমগুলো নিয়মিতভাবে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পক্ষে
এবং সহিংস উগ্রবাদের বিপক্ষে অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে। সমাজের গণ্যমান্য
ব্যক্তি, সুশীল সমাজ সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে।
নিশি: সহিংস উগ্রবাদ
প্রতিরোধে পরিবারের কী কোন ভূমিকা আছে?
শাহীন: পরিবারের উচিত
তরুণেরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মেলামেশা করছে এসব সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ
খবর রাখা।
নিশি: সহিংস উগ্রবাদীদের
দমন করা ছাড়াও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর কি কোন অবদান রাখতে পারে?
শাহীন: আইন শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী যদি সতর্ক থাকে তাহলে উগ্রবাদী চিন্তাধারা প্রচার ও সংগঠন
বিস্তার কঠিন হয়ে যাবে।
সামি: সহিংস উগ্রবাদ রোধে
সরকার কোন কোন সেক্টরে কাজ করতে পারে?
শাহীন: সহিংস উগ্রবাদ রোধে
শিক্ষা, আইন, জনসেবা,
প্রতিরক্ষা, মানবাধিকার প্রতিটি সেক্টরে সরকার
আরো বেশি পদক্ষেপ নিতে পারে।
নিশি: অনলাইনে সহিংস
উগ্রবাদ ছাড়া আর কী কোন সমস্যা আছে?
শামীম: হ্যাঁ, আরো অনেক
ধরনের সমস্যা আছে। যেমন ধরো, সাইবার বুলিং, ফেক নিউজ, প্রোপাগান্ডা, গুজব,
হ্যাকিং, ফিশিংসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ভাইরাস আক্রমণ এমন অনেক কিছু।
নিশি: আমি এই বিষয়গুলো
সম্পর্কে জানি।
শামীম: শুধু তোমাদের
জানলেই চলবে না। তোমাদের অন্যান্য বন্ধুদেরও জানাতে হবে।
সামি: আমরা অন্যদের জানাবো
যেনো তারাও সতর্ক থাকতে পারে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
উগ্রবাদ সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত করে, ব্যাঘাত ঘটায় হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে। সমাজের সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সাহায্য করতে হবে একে ...