কোভিড-১৯ এর সময় মানসিক স্বাস্থ্য

কোভিড-১৯ এর সময় মানসিক স্বাস্থ্য

কোভিড-১৯ এর সংকটকালীন সময়ে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নজর দিতে হবে মানসিক সুস্থতার দিকেও।                                       

কোভিড-১৯ এর সময় মানসিক স্বাস্থ্য

 

নিশির মন ভালো নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাইরে যাওয়া বন্ধ। ঘরে থাকতে থাকতে সে ক্লান্তসারাক্ষণ দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতায় ভুগছে। এসব জানার পর তার বন্ধুরা তার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে। ভিডিও কলে নিশির ছোট খালা ড. সানজিদা চৌধুরী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তিনিও যোগ দেন

 

নিশিঃ করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পরীক্ষা বন্ধ, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেই কোনো নিশ্চয়তা।

খালা: শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, সকল স্তরের মানুষ এতে প্রভাবিত হয়েছে।

সামিঃ সবাই সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে।

খালা: এসময়ে মন খারাপ খারাপ করলে, হতাশায় ভুগলে চলবে না।

নিশি: এই অনিশ্চয়তা থেকে মনে ভয়, দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়

খালা: এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যে অভ্যাসগুলো আছে তা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

সামিঃ যেমনঃ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্বের মতো কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়েছে।

খালা: তবে শুধু ভয়, আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা দিয়ে মহামারী মোকাবেলা করা যাবে না। নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

সামিঃ পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সুস্থ-সবল থাকতে প্রাত্যহিক জীবনে আনতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন।


 

 

নিশি: প্রতিদিনের নিয়মিত যে রুটিন ছিল করোনাভাইরাসের কারণে তার সবকিছু বদলে গেছে।

খালা: দৈনন্দিন জীবনকে সাজাতে হবে নতুন করে। নিয়ম-কানুন একেবারে ছেড়ে দিলেই ক্ষতি।

মাইশাঃ দিনের পুরো সময়কে সুষমভাবে ভাগ করতে হবে যাতে অলসতা গ্রাস না করে।

সামিঃ সারাক্ষণ নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক সংবাদ দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

খালাঃ দিনে এক বা দুইবারের বেশি সংবাদ সংগ্রহ করার প্রয়োজন নেই

সামিঃ সোশ্যাল মিডিয়ার নানা মিথ্যা ও চমকপ্রদ খবর এড়িয়ে চলতে হবে।

সায়মাঃ আমাদের ব্যস্ত থাকতে হবে নাহলে হতাশা থেকে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

খালাঃ হতাশা আর দুশ্চিন্তাকে ভালোভাবে মোকাবেলা না করতে পেরে অনেকেই তার প্রকাশ সহিংসতা দিয়ে করে থাকে।

নিশিঃ আর এজন্যই ক্রান্তিকালে বৃদ্ধি পায় পারিবারিক সহিংসতা ও মতাদর্শিক পার্থক্যের জন্য সহিংসতা।

খালা: বৃদ্ধি পেতে পারে উগ্রবাদী সংগঠনের তৎপরতা। এরা তরুণ-তরুণীদের এই হতাশাকে ব্যবহার করে ভ্রান্ত পথে নিতে পারে।

সামিঃ কেউ হতাশায় ভুগে কী করবে বুঝতে না পারলে তাকে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে।

মাইশাঃ সে যাতে হতাশা থেকে কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নেয় তাও দেখতে হবে।

সায়মাঃ তাকে বিভিন্ন উপায় দেখাতে হবে যাতে এসময়টা সে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারে। 


 

সামিঃ ভাই-বোনদের সাথে ঘরে খেলে, গল্প করে, তাঁদের পড়ালেখায় সাহায্য করে সময় কাটাতে হবে

মাইশাঃ এতে মন ভালো থাকবে, সাথে সাথে পরিবারের বন্ধনটাও দৃঢ় হবে।

খালা: ঘরের বিভিন্ন কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করতে হবে, এতে তাঁরাও খুশি হবেন

নিশিঃ এসময় আমাদের একটু বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। একাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।

মাইশা: ছাদে বা ঘরে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবেব্যায়াম এবং মেডিটেশনও করা যেতে পারে, এতে শরীর ও মন ভালো থাকবে।

খালা: রাতে ঘুমের সমস্যা এড়াতে ঘুমানোর সময় ছাড়া অযথা বিছানায় শুয়ে থাকা উচিত না

সামি: অনলাইনে বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবেতাঁরা কী করছে প্রতিদিন তার খবর নিতে হবে।

খালা: এখন স্কুল বন্ধ তাই লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তবে চিন্তা নাই এখন অনলাইনে ও টেলিভিশনের মাধ্যমে লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মাইশাঃ সৃজনশীল কাজ যেমনঃ ছবি আঁকা, গল্প লেখা ইত্যাদি করলে মন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবে।

খালা: মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিত প্রার্থনা বা উপাসনা করাও ভালো একটা উপায়।

সায়মাঃ নিজের যা করতে ভালো লাগে তাই করা উচিত, যদি তা নিজের বা অন্যের কোনো ক্ষতির কারণ না হয়।

 

সায়মা: এসময়টা ব্যবহার করে নতুন কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে, যেমনঃ নতুন ভাষা, রান্না ইত্যাদি

মাইশাঃ অনলাইনে কোনো একটা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে, যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, মাইক্রোসফট অফিস ইত্যাদি

সামিঃ তাছাড়া কিশোর-কিশোরীদের একঘেয়েমি দূর করতে অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে, সেখানে অংশ নেওয়া যেতে পারে।

খালা: ভিডিও কলে আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও কথা বলা উচিতএই দুঃসময়ে প্রিয়জনদের খোঁজ-খবর নিলে তাঁরা আশ্বস্ত হবেন

মাইশাঃ পাশাপাশি বিনোদনের জন্য সময় বেছে নিতে হবে। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে।

সামিঃ অনলাইনে গেম খেলা, সিনেমা দেখা, গান শোনা, বই পড়া ইত্যাদি করা যেতে পারে।

সায়মাঃ সমাজের জন্যও কাজ করা যেতে পারে। অনলাইনে কারো সহযোগিতা লাগলে অভিভাবকের সহায়তায় তা করা যেতে পারে।

খালাঃ অনলাইনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পোস্ট দিয়ে, মিথ্যা খবর দেখলে ওয়েবসাইটে রিপোর্ট করে অন্যদের সাহায্য করা যেতে পারে। 

নিশি: এতকিছু করার সুযোগ থাকলে তো মন খারাপ হবার বা হতাশ হবার কোনো অবকাশই নেই।

খালা: নিজেকে বিভিন্নভাবে সৃষ্টিশীল, ইতিবাচক, উৎপাদনক্ষম কাজে ব্যস্ত রাখলে আর একঘেয়ে লাগবে না, ভয়-দুশ্চিন্তা আসবে না। সময়টা ভালো কাটবে, মনও ভালো থাকবে।

 

কোভিড-১৯ এর সময় মানসিক স্বাস্থ্য

কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকুন নিজেকে উৎপাদনক্ষম ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত ...

জানার আছে অনেক কিছু

শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি
শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি

পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য ছোটবেলা থেকেই প্রয়োজন সুস্থ স্বাভাবিক ...

আরও পড়ো
শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি মোকাবেলা
শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও ঝুঁকি মোকাবেলা

নিশির খালা শামীম আর সিয়ামকে বুঝিয়ে বলছেন শিশুর সুস্থ-স্বাভাবিক মানসিক ...

আরও পড়ো
কোভিড-১৯ নির্দেশনা
কোভিড-১৯ নির্দেশনা

কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই পারে সকলকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে।    ...

আরও পড়ো
কোভিড-১৯ কে ঘিরে মিথ্যা খবর ও গুজব
কোভিড-১৯ কে ঘিরে মিথ্যা খবর ও গুজব

মিথ্যা খবর ও গুজব কোভিড-১৯ থেকে কোনো অংশে কম ক্ষতিকর নয়। সকলকেই এই ব্যাপারে ...

আরও পড়ো
কোভিড-১৯ এর সময় মানসিক